ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

ফেনীর পানি নেমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে ক্ষত

আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ০১:৪৯:০৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ০১:৪৯:০৭ অপরাহ্ন
ফেনীর পানি নেমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে ক্ষত
গত ২০ অগাস্ট ফেনীর পরশুরামে বানের পানিতে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করায় এলাকার লোকজন মিলে বালুর বস্তা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় মীর্জা নগর ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামটি। এমতাবস্থায় অভাবের সংসারের সঞ্চয়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন গ্রামটিতে সেমিপাকা ঘর করেছিলেন টমটম চালক সোহাগ ও তার স্ত্রী হালেমা। এদিকে বানের পানিতে সেটিও বিলীন হওয়ায় দিশেহারা এ দম্পতি।

হালেমা বলেন, আমরা তো কিচ্ছুই বাঁচাতে পারিন নাই। ঘরের তো কিচ্ছুই নাই। খাইল্ল্যা পিন্দনের এক কাপড় লই আসছি রাস্তার উপরে। ঘরটা এখন ক্যামনে করমু, এটা নিজেরাই কইতে পারুম না।

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে কেউ কেউ ঘর করে দেয়ারও আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু ঘরটা কোথায় করবেন, সেটি নিয়েই দুঃশ্চিন্তা হালেমার। কারণ, বানের পানির স্রোতে তার ঘর ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ঘরের জায়গাটাও ভেঙে চলে গেছে পুকুরের মধ্যে।

তার ভাষ্য, লোকজন আইয়ের বইলতেছে, ঘর করি দিমু জায়গা দেহায় দিতাম। এডা (ঘর) ছাড়া তো আর জায়গাও নাই।

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে অগাস্টের মাঝামাঝিতে দেশের ১২ জেলায় সৃষ্ট বন্যায় সবথেকে বেশি প্লাবিত হয়েছে ফেনী। স্থানীয়দের ভাষ্য, এবারের মত বন্যা এর আগে দেখেনি তারা। বন্যায় ঘরহারা মানুষেরা উঠেছেন স্থানীয় প্রতিবেশীদের ঘরের বারান্দা কিংবা সিঁড়িঘরে।

এবারের বন্যায় সোহাগ-হালেমা দম্পতির ঘরসহ কাশিনগরের নয়টি ঘর ভেঙে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। ঘর ভেঙেছে জরিনা আক্তারেরও। উপায় না পেয়ে উঠেছেন প্রতিবেশীর পাকা ঘরের বারান্দায়।

স্থানীয়রা জানান, গত ১ জুলাই প্রথম বন্যা আক্রান্ত হয় পরশুরাম। এরপর গত ২ অগাস্ট বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে মীর্জা নগরে। বাঁধটি সাময়িকভাবে সংস্কার করার পর ২০ অগাস্ট অতি বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে বেশকিছু অংশ ভেঙে যায়। এসব জায়গা দিয়ে পানি ঢুকে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা।

মীর্জা নগরের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে তুলাতলী বাজারে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, সরকার পরিবর্তনের পর বন্যা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নাম স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কীভাবে যাবে, সেটি তারা জানেন না। সেইসঙ্গে আদৌ তারা সহায়তা পাবেন কিনা, সেটি নিয়েও তাদের দুঃশ্চিন্তা।

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। আমাদের হায়ার অথরিটি, বিভিন্ন এনজিও এবং অনেককেই বলেছি, আমাদের এখন ত্রাণের দরকার নেই। নির্মাণ সামগ্রী দরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এখন সবচেয়ে জরুরি।

এলাকায় জনপ্রতিনিধি না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের ও এলাকার পরিস্থিতির খবর সঠিকভাবে পাচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, এটা জাতীয় প্রেক্ষিতে সব এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছাত্রদের সমন্বয়ে একটা কমিটি করেছি। তারা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি তুলে এনে আমাদের দিচ্ছেন। আশা করছি আমরা প্রকৃত চিত্রটা পাব।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ